আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ২৯শে এপ্রিল, ২০২২ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় “রমযান: মুমিনের প্রশিক্ষনের সময়”-এ বিষয়ে আলোচনা করেন। খুতবার শেষাংশে হুযূর (আই.) পৃবিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য, আল্লাহ্‌র পথে কারাবন্দী আহমদীদের জন্য, পাকিস্তানসহ অন্যান্য স্থানের নিপীড়িত আহমদীদের জন্য দোয়ার আহ্বান জানান এবং জামা’তের অত্যন্ত নিষ্ঠাবান এক সেবক আল্ শিরকাতুল ইসলামিয়া যুক্তরাজ্যের সদ্যপ্রয়াত চেয়ারম্যান মোকাররম আব্দুল বাকী আরশাদ সাহেবের জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন এবং তার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন আর নামাযান্তে তার জানাযা পড়ান।
তাশাহ্‌হুদ, তাআ’ঊয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, রমযান মাস এল এবং যারা এর দ্বারা কল্যাণমণ্ডিত হবার চেষ্টা করেছে তাদের সকলকে কৃপাবারিতে সিক্ত করে চলেও গেল; মাত্র দু’তিনটি দিন অবশিষ্ট রয়েছে। একজন বুদ্ধিমান ও প্রকৃত মু’মিন সর্বদা স্মরণ রাখে এবং রাখা উচিত- রমযান শেষ হওয়ায় আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছি না; বরং রমযান আমাদেরকে যেসব দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছে, সেগুলো স্থায়ীভাবে পালনের ও এক্ষেত্রে উন্নতি করা শিখিয়ে গিয়েছে। ফরয রোযা যদিও শেষ হচ্ছে, কিন্তু অন্যান্য অবশ্য পালনীয় ইবাদতের মান সমুন্নত রাখার ও সেগুলোতে ক্রমাগত উন্নতি করার সময় শুরু হচ্ছে। রমযানের পর একাজ কীভাবে করতে হবে তা যদি আমরা ভুলে যাই, তবে আমরা রমযান সেভাবে অতিবাহিত করি নি যেভাবে মহানবী (সা.) করতে বলেছেন। তিনি (সা.) বলেছেন, পাঁচবেলার নামায, এক জুমুআ থেকে পরবর্তী জুমুআ এবং এক রমযান থেকে পরবর্তী রমযান এসবের মধ্যবর্তী পাপসমূহের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ হয়ে থাকে, তবে শর্ত হল; বড় বড় পাপ বা কবীরা গুনাহ্ যেন সংঘটিত না হয়। হুযূর (আই.) উল্লেখ করেন, মানুষ যদি ছোটখাটো পাপের বিষয়ে উদাসীন থাকে এবং সেগুলো থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা ও এস্তেগফার না করে, তবে সেগুলোও কবীরা গুনাহ্‌তে পরিণত হয়। তাই আমরা যদি পুণ্য অর্জন এবং আল্লাহ্ ও সৃষ্টজীবের প্রাপ্য প্রদানের মাধ্যমে বাকি মাসগুলো অতিক্রম করে এক রমযানকে পরবর্তী রমযানের সাথে যুক্ত না করি, তবে বুঝতে হবে- আমরা রমযান দ্বারা পুরোপুরি লাভবান হই নি। আমাদের সৌভাগ্য হল, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) প্রত্যেকটি বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে আমাদের পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং জীবনযাপনের জন্য আমাদেরকে ইসলামের খাঁটি শিক্ষার অনুসরণে এক কর্মপন্থা বলে দিয়েছেন, যা অবলম্বন করলে আমরা পুণ্যের পথে ধাবমান হতে পারব। অতঃপর হুযূর (আই.) তাঁর (আ.) উপদেশাবলীর মধ্য থেকে কিছু নির্বাচিত অংশ উপস্থাপন করেন।
প্রথমে হুযূর (আই.) নামাযের বিষয়টি তুলে ধরেন। রমযানে ইবাদতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ নিবদ্ধ হয়ে থাকে, ফরয ইবাদতের পাশাপাশি নফলের প্রতিও মানুষ মনোযোগী হয়। কিন্তু নামাযের আবশ্যকতা কেবল রমযান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা বছরই তা আমাদের জন্য ফরয। মহানবী (সা.)ও বারংবার এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি (সা.) বলেন, নামায পরিত্যাগ মানুষকে কুফর ও শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। অপর এক হাদীস থেকে জানা যায়, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসেব নেয়া হবে নামাযের। তাই দৈনিক পাঁচবেলার নামাযের বিষয়ে ঔদাসীন্য প্রদর্শনের কোন সুযোগই নেই। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আমাদেরকে বারংবার নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন এবং কীভাবে নামায পড়তে হয়, কীভাবে এর স্বাদ পেতে হয় ইত্যাদি বিষয়ও শিখিয়েছেন।
তিনি (আ.) বলেন, নামায হল এক বিশেষ দোয়া, কিন্তু মানুষ একে রাজা-বাদশাহ্‌দের ট্যাক্স মনে করে। মূর্খ মানুষ বুঝে না- আল্লাহ্‌র নামাযের কী-ইবা প্রয়োজন? এটাতো এজন্য রাখা হয়েছে যেন মানুষ নিজে এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে। তিনি (আ.) দুঃখ করে বলেন, বর্তমানে ইবাদত, তাক্বওয়া ও ধর্মকর্মের প্রতি মানুষের কোন ভালোবাসা নেই। এর অন্যতম কারণ হল, প্রথাগতভাবে নামায পড়া। মানুষ ইবাদতে যে স্বাদ পাবার কথা তা পায় না। অসুস্থ ব্যক্তি যেমন অত্যন্ত উপাদেয় ও সুস্বাদু খাবারের কোন স্বাদ পায় না, তাদের অবস্থাও ঠিক তদ্রুপ। পৃথিবীতে এমন কোন বস্তু নেই যার মাঝে একপ্রকার স্বাদ নেই; মানুষের জন্য সৃষ্ট সব খাদ্যবস্তুতে একপ্রকার স্বাদ রয়েছে, মনোরম দৃশ্য ও সুর দ্বারা হৃদয় পুলকিত হয়। আল্লাহ্ যেখানে বলেছেন, মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে ইবাদতের উদ্দেশ্যে- তাহলে তো এর মাঝে সবচেয়ে উন্নত ও পরম স্বাদ থাকার কথা! বস্তুত সবচেয়ে বেশি স্বাদ ইবাদতের মাঝেই রাখা রয়েছে, কিন্তু অসুস্থ আত্মার মানুষ তাতে স্বাদ পায় না, কারণ তাদের আত্মিক অনুভূতি মৃত। এরূপ ব্যক্তিদের অবস্থা এতদূর সঙ্গীন হয়ে ওঠে যে, কখনও কখনও আযান শুনলেও তারা বিরক্ত হয়। এর সমাধান বলতে গিয়ে তিনি (আ.) বলেন, মানুষের উচিত পরম বিগলন ও আবেগের সাথে আল্লাহ্‌র সমীপে দোয়া করা- যেভাবে তিনি তাকে অন্যান্য জিনিসের স্বাদ দিয়েছেন, সেভাবে নামাযের স্বাদও যেন একবার তাকে পাইয়ে দেন। একবার যখন মানুষ সেই স্বাদ পেয়ে যাবে এবং সেই স্বাদ সে উপভোগ করবে- তখন সে তা পুনরায় লাভ করার জন্য ব্যাকুল হবে ও এদিকে মনোযোগ দেবে। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি দু’এক পেয়ালা মদ পান করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং ততক্ষণ পর্যন্ত মদ পান করতে থাকে যতক্ষণ তার নেশা না ধরে। বিচক্ষণ মানুষ এত্থেকেও শিক্ষা নিতে পারে- যতক্ষণ না সে নামাযে স্বাদ পাচ্ছে, সে যেন নামায পড়তে থাকে। প্রকৃত নামায সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, إِنَّ ٱلۡحَسَنَـٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّيِّـَٔاتِ‌ অর্থাৎ, নামায পাপকে দূর করে দেয় (সূরা হুদ: ১১৫) এবং নামায অশ্লীল ও মন্দকর্ম থেকে মানুষকে দূূরে রাখে। কিন্তু প্রথাগতভাবে নামায পড়ার নাম হাসানাত নয়; মুরগির দানা খুঁটে খাবার মত দ্রুত রুকু-সিজদা করার নাম হাসানাত নয়। অন্তঃসারশূন্য নামাযে সেই প্রভাব কীভাবে সৃষ্টি হতে পারে? তাই নামায প্রকৃত অর্থে- দোয়ার মত বুঝে বুঝে পড়তে হবে। নামায সেভাবে পড়তে হবে যেভাবে মহানবী (সা.) পড়েছেন ও শিখিয়েছেন। এক ব্যক্তি একবার মসজিদে এসে নামায পড়ে; মহানবী (সা.) তাকে বলেন- তোমার নামায হয় নি, আবার পড়। এভাবে তিনবার তাকে নামায পড়ান এবং অবশেষে তাকে বলে দেন, কীভাবে নামায পড়তে হবে; রুকু-সিজদাসহ প্রতিটি ওঠাবসা ও অঙ্গসঞ্চালনা থেমে থেমে, ধীরে ধীরে করতে হবে ও মনোযোগের সাথে নামাযে সূরা প্রভৃতি পাঠ করতে ও দোয়া করতে হবে।
নামাযের সাথে সাথে একজন মু’মিনের দায়িত্ব হল, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, একে অনুধাবন করা ও এর প্রতি গভীরভাবে প্রণিধান করা; কুরআনের তফসীরও পড়া উচিত এবং এর জ্ঞান অর্জন করা উচিত। এটিও এক রমযানকে আরেক রমযানের সাথে যুক্ত করার একটি মাধ্যম। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) কুরআনের অতুলনীয় মর্যাদা ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের কাছে যদি কুরআন না থাকতো এবং শুধু হাদীসগ্রন্থগুলোই ধর্মগ্রন্থ হতো- তবে আমরা লজ্জায় মুখও দেখাতে পারতাম না। ‘কুরআন’ শব্দের মাঝে এক মহান ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান; এটি ইঙ্গিত করে- এমন এক যুগ আসবে যখন এই একটি গ্রন্থই পড়ার যোগ্য হবে এবং অন্যান্য ধর্মের গ্রন্থগুলো পরিত্যাজ্য হয়ে যাবে। তিনি বলেন, নিতান্ত দুর্ভাগা সেই ব্যক্তি যে দিন-রাত অন্যান্য বই নিয়ে পড়ে থাকে, কিন্তু কুরআনের প্রতি মনোযোগ দেয় না। কুরআনের নূরের সামনে কোন অন্ধকারই টিকতে পারবে না।
পুণ্যকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য তিনি (আ.) আরেকটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, সেটি হল ধর্মকে জাগতিকতার ওপর প্রাধান্য দেয়া। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাহাবীদের আদর্শ এক্ষেত্রে একান্ত অনুকরণীয়; তাঁরা জগতে থেকেও সর্বদা আল্লাহ্‌র স্মরণে নিমগ্ন থাকতেন এবং ধর্মের প্রয়োজনের সময় জাগতিকতাকে দূরে সরিয়ে দিতেন। ধর্মকে জাগতিকতার ওপর প্রাধান্য দেয়ার জন্য একদিকে যেমন ঈমানের দৃঢ়তা আবশ্যক, সেইসাথে জ্ঞানগত ও কর্মগত উন্নতিও আবশ্যক।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও উত্তম আচরণ প্রদর্শন। তিনি (আ.) বলেন, জামা’ত ততদিন সবুজ-শ্যামল ও সুশোভিত হবে না যতদিন নিজেদের ভেতর এগুলো সৃষ্টি না হবে। কারও মাঝে দুর্বলতা বা ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখলে তার প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করা এবং তা বলে বেড়ানো- খোদা তা’লা এটি পছন্দ করেন না। নিজ সন্তান বা ভাইয়ের ভুল দেখলে কি মানুষ তাকে আড়ালে ডেকে বুঝায় নাকি ঢোল পিটিয়ে মানুষকে বলে বেড়ায়? পার্থিব ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে এই মানদণ্ড হলে ধর্মের ভিত্তিতে আল্লাহ্ যখন ভাই-ভাই বানিয়ে দেন, সেখানে কেন ভিন্ন মানদণ্ড হবে? প্রাসঙ্গিকভাবে তিনি (আ.) বলেন, ক্রোধ সৃষ্টির কারণ হল অহংকার এবং ক্রোধের ফলেও অহংকার সৃষ্টি হয়। প্রকৃত বীর হল সেই ব্যক্তি, যে নিজ ক্রোধকে প্রশমিত করেন, নিজ চরিত্র ও আচরণে পরিবর্তন সৃষ্টি করেন; এরূপ বীর আমাদের জামা’তে প্রয়োজন। নিজ ভাইদের জন্য তাদের অনুপস্থিতিতে দোয়া করা এক্ষেত্রে চমৎকার একটি মাধ্যম; এর মাধ্যমে ব্যক্তির নিজের প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে থাকে।
হুযূর (আই.) আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করেন, তা হল; তৌহীদ তথা আল্লাহ্‌র একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। আসলে একজন মু’মিনের প্রতিটি কাজই তৌহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য হওয়া দরকার। মৌখিক বয়আ’তের আসলে কোন মূল্যই নেই যদি না প্রকৃত পরিবর্তন মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়। মহানবী (সা.)-এর জীবন-মরণ সবই আল্লাহ্‌র জন্য ছিল, অথচ মুসলমানদের বর্তমান চিত্র হল- মৃত্যু আসলেই কেবল আল্লাহ্‌র কথা স্মরণ হয়, বাকি সময় দুনিয়াদারীতে মত্ত থাকে। প্রকৃত মুসলমান হবার জন্য অজস্র মৃত্যুর ভেতর দিয়ে যেতে হয় এবং সবকিছু আল্লাহ্‌র খাতিরে করতে হয়। তিনি (আ.) বলেন, মুসলমানদের সংশোধনের জন্যই আল্লাহ্ তাঁকে পাঠিয়েছেন; যদি তাঁকে মান্য করার পরও আমরা নিজেদের মাঝে সংশোধন সৃষ্টি না করি, তবে প্রকারান্তরে আমরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে সাব্যস্ত করতে চাচ্ছি- ইমাম মাহদী আসার কোন দরকারই ছিল না। তাই আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত ও নিজেদের সংশোধন করা উচিত। এসব উদ্ধৃতি উপস্থাপন করে হুযূর (আই.) বলেন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর ভাষায় আমি আপনাদের সামনে এক কর্মপন্থা উপস্থাপন করেছি, এটি পালনের জন্য পরিপূর্ণ চেষ্টা করতে হবে। নামায সুন্দরভাবে আদায় করতে হবে, কুরআনের নির্দেশ পালন করতে হবে, একে অপরের প্রাপ্য প্রদান করতে হবে, তৌহীদ বা আল্লাহ্‌র একত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় সবরকম আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হবে; তবেই আমরা বয়আ’তের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনকারী হতে পারব। আল্লাহ্ তা’লা আমাদের সেই সৌভাগ্য দান করুন।
এরপর হুযূর (আই.) বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য, আল্লাহ্‌র পথে কারাবন্দী আহমদীদের জন্য, পাকিস্তানসহ অন্যান্য স্থানের নিপীড়িত আহমদীদের জন্য দোয়ার আহ্বান জানান। খুতবার শেষাংশে হুযূর (আই.) জামা’তের অত্যন্ত নিষ্ঠাবান এক সেবক আল্ শিরকাতুল ইসলামিয়া যুক্তরাজ্যের সদ্যপ্রয়াত চেয়ারম্যান মোকাররম আব্দুল বাকী আরশাদ সাহেবের জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন এবং তার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন আর নামাযান্তে তার জানাযা পড়ান।

Leave a Reply